জীবনবৃত্তান্ত (CV বা Resume) হলো আপনার পেশাগত জীবনের প্রথম ছাপ। নিয়োগকর্তা সাধারণত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি জীবনবৃত্তান্ত দেখে সিদ্ধান্ত নেন আপনি সাক্ষাৎকারের যোগ্য কিনা। তাই আপনার জীবনবৃত্তান্তকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আমি একজন পেশাদার ক্যারিয়ার গাইড হিসেবে চাকরি খোঁজার অভিজ্ঞতা থেকে এখানে কিছু সহজ টিপস শেয়ার করছি।
১. সঠিক ফরম্যাট বেছে নিন
সবার আগে একটি সঠিক ফরম্যাট নির্বাচন করুন। নিয়োগকর্তারা সাধারণত গুছানো এবং পরিষ্কার জীবনবৃত্তান্ত পছন্দ করেন।
Basic Structure:
- আপনার নাম এবং যোগাযোগের তথ্য (ফোন নম্বর, ইমেল)।
- সংক্ষিপ্ত “Objective” বা “Summary”।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা।
- কাজের অভিজ্ঞতা।
- দক্ষতা।
- অতিরিক্ত তথ্য (যদি প্রাসঙ্গিক হয়)।
Font ও Design:
সাদা কাগজে সহজ ও পড়ার উপযোগী ফন্ট (যেমন Calibri বা Arial) ব্যবহার করুন। খুব বেশি রঙ বা ডিজাইন এড়িয়ে চলুন।
২. জীবনের উদ্দেশ্য বা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি লিখুন
লক্ষ্য বা পরিচিতি অংশে সংক্ষেপে লিখুন আপনি কী ধরণের কাজ খুঁজছেন এবং কেন আপনি ওই কাজের জন্য যোগ্য। এটি ২-৩ লাইনের বেশি হওয়া উচিত নয়।
উদাহরণ:
“আমি একজন উদ্যমী এবং অধ্যবসায়ী তরুণ, যার বিক্রয় ও বিপণনে ২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে এবং একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অবদান রাখতে আগ্রহী।”
৩. আপনার দক্ষতাগুলো তুলে ধরুন
জীবনবৃত্তান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আপনার দক্ষতা। আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক দক্ষতাগুলো যোগ করুন।
উদাহরণ:
- কম্পিউটার দক্ষতা (MS Office, Excel)।
- যোগাযোগ দক্ষতা।
- দল পরিচালনা।
- দ্রুত শেখার ক্ষমতা।
৪. অভিজ্ঞতা গুছিয়ে লিখুন
আপনার পেশাগত অভিজ্ঞতা যত গুছিয়ে তুলে ধরবেন, নিয়োগকর্তার কাছে ততই ভালো প্রভাব পড়বে।
কীভাবে লিখবেন:
- কাজের সময়কাল (মাস ও বছর উল্লেখ করুন)।
- কোম্পানির নাম।
- আপনার পদবী।
- কাজের বিবরণ (যা সংক্ষেপে ও কার্যকরীভাবে কাজের ভূমিকা বোঝায়)।
উদাহরণ:
কর্মস্থল: ABC Company
পদবী: সেলস এক্সিকিউটিভ (মার্চ ২০২১ – জানুয়ারি ২০২৩)
দায়িত্ব:
- নতুন ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা।
- মাসিক বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা।
- রিপোর্ট তৈরি করা।
৫. শিক্ষাগত যোগ্যতা সঠিকভাবে উল্লেখ করুন
শিক্ষাগত যোগ্যতার তালিকা করুন। সর্বশেষ ডিগ্রি সবার আগে উল্লেখ করুন।
উদাহরণ:
- এমবিএ (বিপণন) – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০২০
- বিএসসি (কম্পিউটার সায়েন্স) – জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৮
৬. জীবনবৃত্তান্ত ছোট ও প্রাসঙ্গিক রাখুন
নিয়োগকর্তারা সাধারণত দীর্ঘ জীবনবৃত্তান্ত পড়ার ধৈর্য রাখেন না। ১-২ পৃষ্ঠার মধ্যে সব তথ্য উপস্থাপন করুন। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য এড়িয়ে চলুন।
৭. বানান ও ব্যাকরণ ঠিক রাখুন
একটি ছোট ভুলও আপনার জীবনবৃত্তান্তকে অযোগ্য প্রমাণ করতে পারে। তাই বানান এবং ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা, তা বারবার চেক করুন।
৮. পুরস্কার ও সার্টিফিকেট উল্লেখ করুন (যদি প্রাসঙ্গিক হয়)
আপনার অর্জনগুলো দেখাতে ভুলবেন না। এটি আপনার যোগ্যতা বাড়িয়ে তুলবে
উদাহরণ:
- “সেরা কর্মচারী পুরস্কার” – ABC Company, ২০২২
- “ডিজিটাল মার্কেটিং সার্টিফিকেট” – Google, ২০২১
৯. নিয়োগকর্তার প্রয়োজন অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত কাস্টমাইজ করুন
প্রতিটি চাকরির জন্য একটিই জীবনবৃত্তান্ত ব্যবহার করবেন না। যে কাজের জন্য আবেদন করছেন, তার জন্য জীবনবৃত্তান্ত সামান্য পরিবর্তন করুন।
১০. একটি সুন্দর কভার লেটার যোগ করুন
জীবনবৃত্তান্তের সাথে একটি কভার লেটার দিন, যেখানে আপনি সংক্ষেপে আপনার যোগ্যতা ও আগ্রহ ব্যাখ্যা করবেন। এটি নিয়োগকর্তার কাছে আপনার সিরিয়াসনেস বোঝায়।
শেষ কথা
একটি ভালো জীবনবৃত্তান্ত আপনাকে চাকরি পাওয়ার প্রথম ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই এটি তৈরি করতে সময় দিন এবং মনোযোগ দিন। মনে রাখবেন, এটি আপনার যোগ্যতার প্রতিচ্ছবি।