আপনার পছন্দের কাজ পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো একটি ভালো জীবনবৃত্তান্ত (CV বা Resume) তৈরি করা। এটি এমন একটি ডকুমেন্ট যেখানে আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। জীবনবৃত্তান্ত ভালোভাবে তৈরি করলে, এটি আপনাকে নিয়োগকারীর সামনে নিজের মূল্য প্রমাণ করার সুযোগ দেয়।
এখানে আমি ধাপে ধাপে একটি পেশার জন্য সঠিক জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেছি।
১. সঠিক ফরম্যাট নির্বাচন করুন
জীবনবৃত্তান্তে মূলত তিন ধরনের ফরম্যাট ব্যবহৃত হয়:
- কালানুক্রমিক (Chronological): অভিজ্ঞতাগুলো সময় অনুযায়ী সাজানো।
- কার্যকরী (Functional): দক্ষতাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া।
- মিশ্রণ (Combination): দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয়।
আপনার যদি অনেক অভিজ্ঞতা থাকে, তবে কালানুক্রমিক ফরম্যাট বেছে নিন। আর যদি আপনি নতুন চাকরিপ্রার্থী হন, তাহলে কার্যকরী ফরম্যাট ভালো।
২. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে লিখুন
জীবনবৃত্তান্তের শুরুতেই নিজের নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা এবং ঠিকানা দিন। এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিক হওয়া জরুরি।
উদাহরণ:
নাম: রিফাত হাসান
মোবাইল: ০১৭১২৩৪৫৬৭৮
ইমেইল: [email protected]
ঠিকানা: ১২৩, বনানী, ঢাকা
৩. সংক্ষিপ্ত পরিচিতি লিখুন
একটি ছোট প্যারাগ্রাফে নিজের পরিচিতি দিন। এতে আপনার প্রধান দক্ষতা এবং কাজের উদ্দেশ্য উল্লেখ করুন।
উদাহরণ:
“আমি একজন দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনার, যিনি ৩ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্রিয়েটিভ ডিজাইন তৈরি করি। আমার লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী এবং চিত্তাকর্ষক ডিজাইন তৈরি করা।”
৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করুন
আপনার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে লিখুন।
উদাহরণ:
ডিগ্রি প্রতিষ্ঠান বছর ফলাফল
স্নাতক (কম্পিউটার সায়েন্স) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ ৩.৮৫ (৪.০০)
এইচএসসি নটর ডেম কলেজ ২০১৬ ৪.৯০ (৫.০০)
এসএসসি বিএএফ শাহীন স্কুল ২০১৪ ৫.০০ (৫.০০)
৫. কাজের অভিজ্ঞতা যুক্ত করুন
যদি আপনার কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সেটি সময় অনুযায়ী উল্লেখ করুন। কাজের দায়িত্ব এবং অর্জনগুলো পরিষ্কারভাবে লিখুন।
উদাহরণ:
পদের নাম: গ্রাফিক ডিজাইনার
প্রতিষ্ঠান: ক্রিয়েটিভ স্টুডিও
সময়কাল: জানুয়ারি ২০২১ – বর্তমান
দায়িত্ব:
- সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য পোস্টার ও ব্যানার ডিজাইন।
- ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী লোগো তৈরি।
৬. দক্ষতা (Skills) যোগ করুন
আপনার বিশেষ দক্ষতাগুলো আলাদা করে তুলে ধরুন।
উদাহরণ:
- কম্পিউটার দক্ষতা: মাইক্রোসফট অফিস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর।
- ভাষাজ্ঞান: বাংলা (ফলপ্রসূ), ইংরেজি (প্রথমিক)।
- নেতৃত্ব: দলের কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম।
৭. অতিরিক্ত তথ্য দিন (যদি প্রয়োজন হয়)
যদি কোনো অতিরিক্ত কোর্স বা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি উল্লেখ করুন।
উদাহরণ:
- কোর্স: গ্রাফিক ডিজাইন সার্টিফিকেট কোর্স (২০২১)।
- প্রশংসাপত্র: প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ কর্মী হিসেবে স্বীকৃতি।
৮. বানান এবং ব্যাকরণ যাচাই করুন
লেখার পরে আপনার জীবনবৃত্তান্তটি ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। ছোটখাটো ভুল থাকলে তা সংশোধন করুন। ভুল বানান বা তথ্যের কারণে অনেক ভালো সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
৯. পেশার সাথে মানানসই করে জীবনবৃত্তান্ত সাজান
প্রতিটি পদের জন্য আলাদা জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করার চেষ্টা করুন। প্রতিটি কাজের বিবরণ এবং দক্ষতাগুলো ঐ পদের প্রাসঙ্গিকতার উপর ভিত্তি করে সাজান।
১০. জীবনবৃত্তান্ত সঠিক ফরম্যাটে জমা দিন
অনলাইনে আবেদন করলে PDF ফরম্যাট ব্যবহার করুন, যাতে ফাইলটি অপরিবর্তিত থাকে। আর যদি প্রিন্ট করতে হয়, তবে A4 সাইজের কাগজে ভালো মানের প্রিন্ট করুন।
শেষ কথা
জীবনবৃত্তান্ত এমনভাবে তৈরি করুন যাতে নিয়োগকারী আপনার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান এবং মনে করেন আপনি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত। এটি আপনার প্রথম পরিচয়ের মাধ্যম, তাই এটি যত্নসহকারে তৈরি করা জরুরি।