আমি পেশাদার ক্যারিয়ার গাইডেন্স দিয়ে মানুষকে তাদের সঠিক পেশার দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করি। আজকের আলোচনা খুব সহজ একটা প্রশ্ন নিয়ে— “ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কি দরকার?”।
আমি চেষ্টা করব এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে, যেন একজন ১৫ বছরের তরুণ/তরুণীও সহজেই বিষয়টা বুঝতে পারে।
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং মানে কী?
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এমন এক ধরনের সহায়তা, যা তোমাকে সঠিক পেশা বেছে নিতে সাহায্য করে। এটা একজন পরামর্শদাতার (কাউন্সেলরের) সঙ্গে তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলার সুযোগ।
যদি তুমি চিন্তায় থাকো,
- “আমি কী করব?”
- “কোন বিষয় পড়াশোনা করব?”
- “কোন কাজ আমার জন্য ভালো হবে?”
তাহলে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং তোমার জন্য প্রয়োজনীয়।
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কেন দরকার?
তুমি ভাবতে পারো, “আমি নিজেই তো সিদ্ধান্ত নিতে পারি!” কিন্তু কখনো কখনো আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যেখানে বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন। ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কেন দরকার তার কয়েকটি কারণ:
১. অসংখ্য পছন্দের মধ্যে দ্বিধা কাটাতে
আজকের দিনে পেশার সংখ্যা এত বেশি যে, ঠিক কোনটা তোমার জন্য সেরা হবে, তা বুঝতে সময় লাগে। কাউন্সেলর তোমার যোগ্যতা, পছন্দ, এবং বাজারের চাহিদা বিশ্লেষণ করে সেরা অপশন খুঁজে দিতে পারে।
২. সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে
ভুল পেশা বেছে নিলে সময় এবং টাকা দুটোই নষ্ট হয়। সঠিক গাইডেন্স পেলে শুরু থেকেই সঠিক পথে থাকা যায়।
৩. নিজের দক্ষতা জানা
অনেকে জানে না তাদের কী কী যোগ্যতা আছে। কাউন্সেলর তোমার শক্তি এবং দুর্বলতা বের করতে সাহায্য করে।
৪. মনের দুশ্চিন্তা কমাতে
পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হলে, কিংবা নতুন কিছু শুরু করতে ভয় লাগলে, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
কাদের জন্য দরকার?
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কেবল চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক তরুণদের জন্য নয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মানুষ ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং থেকে উপকৃত হতে পারে।
- স্কুল বা কলেজের ছাত্র: কী বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করব?
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র: কোন কাজ বা ইন্টার্নশিপ করব?
- চাকরি খুঁজছেন যাঁরা: আমার জন্য কোন কাজ সঠিক?
- পেশা পরিবর্তন করতে চান: নতুন ক্ষেত্রে কীভাবে প্রবেশ করব?
ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কিভাবে কাজ করে?
একজন ক্যারিয়ার কাউন্সেলর বিভিন্ন ধাপে তোমাকে সাহায্য করে:
- তোমার পছন্দ ও দক্ষতা বোঝা:
কয়েকটি প্রশ্ন করে বা ছোট পরীক্ষা নিয়ে তোমার যোগ্যতা এবং পছন্দের দিক খুঁজে বের করা। - পেশার তালিকা তৈরি:
তোমার জন্য কোন কোন পেশা ভালো হতে পারে তার তালিকা দেওয়া। - পরিকল্পনা করা:
পরবর্তী ধাপগুলো (কোর্স করা, ইন্টার্নশিপ খোঁজা ইত্যাদি) কী হবে, তা নিয়ে কাজ করা। - মোটিভেশন দেওয়া:
অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে সাহস লাগে। ক্যারিয়ার কাউন্সেলর তোমাকে সেই সাহস দেয়।
কীভাবে শুরু করবে?
- অনলাইনে কাউন্সেলর খুঁজে নাও:
অনেক ওয়েবসাইট ও বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা অনলাইন সেশনের মাধ্যমে গাইডেন্স দেন। - স্কুল বা কলেজের ক্যারিয়ার সেন্টার:
যদি তোমার স্কুলে বা কলেজে ক্যারিয়ার সেন্টার থাকে, তাদের সঙ্গে কথা বলো। - বিশেষ কোর্স বা ওয়ার্কশপ:
অনলাইনে বা স্থানীয়ভাবে ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত ওয়ার্কশপে যোগ দাও।
শেষ কথা
ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ভুল করলে হয়তো সেই ভুল ঠিক করতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। তাই শুরু থেকেই সঠিক পথে চলার চেষ্টা করো। যদি দ্বিধায় থাকো, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং তোমার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, তোমার ইচ্ছা এবং স্বপ্নের সঙ্গে মেলে এমন কাজ বেছে নাও। ভালো ক্যারিয়ার মানে শুধুই বেশি টাকা আয় নয়; এটা এমন কিছু, যা তোমাকে আনন্দ এবং তৃপ্তি দেবে।