চাকরির ইন্টারভিউয়ে বেতন নিয়ে আলোচনা করার সহজ উপায়
চাকরির ইন্টারভিউ মানেই একটা উত্তেজনা আর উদ্বেগের মিশ্রণ। বিশেষ করে যখন বেতন নিয়ে কথা বলতে হয়, তখন অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান। কীভাবে শুরু করবেন? কতটা দাবি করবেন? খুব বেশি বললে কি খারাপ দেখাবে?
আমি একজন জব প্রফেশনাল হিসেবে বলতে পারি, এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু সহজ কৌশল মেনে চললে বেতন নিয়ে আলোচনা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আসুন, ধাপে ধাপে দেখি কীভাবে এটি করবেন।
১. আপনার বাজার মূল্য জানুন
আপনার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার জন্য বাজারে সাধারণত কত টাকা দেওয়া হয়, তা আগে থেকে জেনে নিন।
- অনলাইনে বিভিন্ন সাইট (যেমন: Glassdoor, PayScale) থেকে একই পদের বেতনের পরিসর দেখুন।
- পরিচিত কেউ যদি একই পজিশনে কাজ করে, তার সঙ্গে কথা বলুন।
এটি আপনাকে নিজের মূল্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেবে।
২. ইন্টারভিউতে সরাসরি বেতন নিয়ে আলোচনা করবেন না
প্রথমে কোম্পানির কথা শুনুন। আপনার কাজের দায়িত্ব, সুযোগ-সুবিধা এবং কোম্পানির সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুন।
- শুরুতেই বেতন নিয়ে কথা তুললে মনে হতে পারে, আপনি শুধু টাকা নিয়েই ভাবছেন।
- বরং, কোম্পানির প্রয়োজন বুঝে তারপর নিজের দাবি তুলুন।
৩. প্রস্তুত থাকুন প্রশ্নের জন্য
ইন্টারভিউয়ার প্রায়ই জানতে চায়, “আপনার বেতন চাহিদা কী?”। এই প্রশ্নের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন।
- আপনি বলতে পারেন:
“আমি মনে করি, এই পজিশনের জন্য বাজারে যে পরিসর আছে, তার মধ্যেই থাকবে। তবে আমি প্রথমে কাজের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।” - এটি ইঙ্গিত দেয় যে আপনি টাকা নয়, কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
৪. নিজের যোগ্যতা বুঝিয়ে বলুন
বেতন নিয়ে কথা বলার সময় আপনার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, এবং সফলতার উদাহরণ তুলে ধরুন।
- উদাহরণ:
“আমার গত পজিশনে আমি বিক্রয় ২০% বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এই ধরনের কাজ আমি আপনার কোম্পানির জন্যও করতে পারব। এজন্য বাজারমূল্য অনুযায়ী ৩০,০০০ টাকা আশা করছি।”
এভাবে আপনি স্পষ্ট এবং পেশাদার দেখাবেন।
৫. নমনীয় থাকুন
কোম্পানি যদি আপনার চাহিদা অনুযায়ী বেতন দিতে না পারে, তবে অন্যান্য সুবিধা নিয়ে আলোচনা করুন, যেমন:
- বোনাস।
- ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম।
- চিকিৎসা সুবিধা।
কিছু ক্ষেত্রে বেতন একটু কম হলেও অন্য সুবিধাগুলো ভালো হতে পারে।
৬. “না” বলতেও শিখুন
আপনার যোগ্যতার তুলনায় যদি বেতন খুবই কম হয় এবং আলোচনা করেও সমাধান না আসে, তাহলে বিনয়ের সঙ্গে “না” বলুন।
- উদাহরণ:
“ধন্যবাদ, কিন্তু আমি মনে করি এটি আমার বর্তমান অভিজ্ঞতার জন্য যথাযথ নয়।”
৭. অনুশীলন করুন
বাড়িতে বা বন্ধুর সঙ্গে ইন্টারভিউর মতো পরিবেশ তৈরি করে অনুশীলন করুন। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং বেতন নিয়ে কথা বলতে কম অস্বস্তি হবে।
উপসংহার
বেতন নিয়ে আলোচনা করাটা কোনো লজ্জার বিষয় নয়। এটি আপনার কাজের মূল্য ঠিক করার একটা অংশ। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন, নম্রতার সঙ্গে নিজের যোগ্যতার মূল্যায়ন করুন। মনে রাখবেন, ভালো প্রস্তুতি আর সঠিক কৌশলই সফল আলোচনার চাবিকাঠি।